নক্ষত্রের নিচে নীরবতা
✴️ অধ্যায় ১: “আলো পড়ে রাত্রির গায়ে”
বারো বছরের এক বালক, আদিব রহমান, যার কৌতূহল অসীম। বাবা একজন স্কুল শিক্ষক, মা গৃহিণী। তাদের তিন কক্ষের মাটির বাড়ির পাশে একটা ছোট্ট খোলা উঠোন, যেখানেই আদিব তার হাতে বানানো টেলিস্কোপ বসিয়ে প্রতিরাতে তারাদের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আজকের রাতটা সে আগেই বুঝেছিল ভিন্নরকম। বিকেলেই সে খেয়াল করেছিল পশ্চিম আকাশে সূর্য ডুবার পর একটা হালকা নীল রেখা ছড়িয়ে পড়ছিল আকাশের কিনারে। সে রাতের খাওয়া সেরে, টেলিস্কোপ ঘষে-মেজে প্রস্তুত করে রেখেছিল।
রাত ঠিক ১২টা। হঠাৎ আকাশ জুড়ে এক ঘূর্ণায়মান বলয়ের মতো আলো দেখা দিলো—গভীর নীল, যেন সমুদ্রের গভীর তলদেশ থেকে উঠে আসা কোনো তরঙ্গ। সাথে সাথে বাতাস থেমে গেল। গাছের পাতাগুলো থরথর করে কেঁপে উঠলো। আর সেই মুহূর্তেই এক ধরণের “ভোঁ-ভোঁ” শব্দ ভেসে এলো উত্তর আকাশ থেকে।
আদিব বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ সে দেখতে পেল একটা আগুনের গোলা ভেঙে পড়ছে মাঠের ভেতর। তার বুকের ভেতর কাঁপুনি ধরলো। কৌতূহল তাকে ঘরে বসতে দিলো না। পকেটে টর্চ আর গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়লো সে।
প্রায় আধাঘণ্টা হেঁটে যখন সে পৌঁছালো ধানক্ষেতের পাশে, তখন আশপাশে যেন একটা চুম্বকীয় স্তব্ধতা তৈরি হয়েছে। সে দেখতে পেল, একটি ধাতব গোলাকার বস্তু অর্ধেক মাটিতে ঢুকে আছে। ধাতব শরীর থেকে বের হচ্ছে নীলচে আলোর হালকা শিখা, আর মাঝে মাঝে একটা মৃদু শব্দ: টিক…টিক…
আদিব হাত বাড়িয়ে ছোঁয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু তার আগেই বস্তুটি যেন তার উপস্থিতি টের পেলো, আর এক ঝলকে তার দিকেই একটা হালকা রশ্মি ছুঁড়ে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে আদিবের মাথায় এক অদ্ভুত অনুভূতি হলো, যেন কোনো শব্দ ছাড়া তার মাথার ভেতর কথা ঢুকছে।
“আমি নোভা-৭। আমি এসেছি ইনরিস গ্রহ থেকে। সময় এসেছে শুরুর।”
আদিব দম বন্ধ করে ফেলল। এটা কি স্বপ্ন, না সত্যিই সে একটা এলিয়েন রোবটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে?
তবে ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেল না সে। সাহস করে বলল, “তুমি কী চাও?”
“তোমার সাহায্য। পৃথিবী বিপদের মুখে। তুমি একজন ‘সংরক্ষক’। তোমার দেহে আছে এক প্রাচীন তরঙ্গের ধারা যা সক্রিয় হলে সময়ের রূপরেখা বদলাতে পারো।”
এই প্রথম আদিব বুঝল, তার জীবন আর আগের মতো থাকবে না।
✴️ অধ্যায় ২: "সংরক্ষকের জাগরণ"
আদিব যেন বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে কল্পনার রাজ্যে পা রেখেছে। নীল ধাতব গোলাটি তার সামনে অল্প অল্প কাঁপছে, আর চারপাশে বাতাস থেমে গেছে যেন সময়টাই জমে আছে এই একটুখানি জায়গায়।
গলার স্বর ছাড়াই আবার সেই কণ্ঠস্বর—নোভা-৭—তার মাথার ভেতর বলে উঠল:
“তুমি একজন ‘ভূ-সংরক্ষক’। পৃথিবীতে কয়েক হাজার বছর পর পর একজন বিশেষ মানুষ জন্মায়, যার কোষে ‘কাল-তরঙ্গ’ ধারণ করার ক্ষমতা থাকে। তুমি তাদের মধ্যে একজন।”
আদিব কিছুই বুঝতে পারছে না। “কী বলছ তুমি? আমি তো একটা সাধারণ ছেলে! আমি তো শুধু টেলিস্কোপে তারা দেখি!”
নোভা-৭ এবার একটু উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তার শরীর থেকে ভেসে উঠল একটি থ্রিডি চিত্র—একটা গোলক বস্তু, যার চারদিকে অদ্ভুত চক্রাকার রেখা।
“তোমার মধ্যে রয়েছে সেই শক্তির বীজ, যা এই ‘টাইম-কোর’ কে সক্রিয় করতে পারে। আমাদের গ্রহের সংকেত অনুযায়ী, পৃথিবীতে সময়ের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। কিছু গোপন বিজ্ঞানী, যাদের বলা হয় ‘ছায়া-পর্যবেক্ষক’, তারা সময় নিয়ে পরীক্ষা করছে। এর ফলে ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।”
আদিব ভ্রু কুঁচকে ফেলল, “তাহলে আমার কী করতে হবে?”
নোভা-৭ এবার ধীরে ধীরে মাটি থেকে উঠল, যেন ভাসছে বাতাসে।
“তোমাকে প্রথমে যেতে হবে ‘সীমান্ত-গুহা’তে। সেখানে লুকানো আছে একটি প্রাচীন সময়চক্র, যার সাথে তোমার শরীরের তরঙ্গ প্রতিক্রিয়া করবে। এরপর তুমি বুঝবে তোমার আসল পরিচয়।”
“সীমান্ত-গুহা?” আদিব ভাবল, “ওটা তো ভারত সীমান্তের দিকে, একটা পুরনো পাহাড়ি গুহা। লোকেরা বলে, ওখানে ভূত আছে। কেউ যেতেই চায় না!”
কিন্তু আজকের রাতের অভিজ্ঞতার পর ‘ভূতের গল্প’ তাকে আর ভয় দেখাতে পারছে না।
🌌 অভিযান শুরু
পরদিন ভোর। গ্রামের মানুষ এখনও ঘুমে। আদিব তার স্কুলব্যাগে কয়েকটা রুটি, পানির বোতল, একখানা পুরনো কম্পাস আর ক্যামেরা ভরে নিল। তার মুখে ভয় নেই, শুধু কৌতূহল আর একধরনের অদ্ভুত দায়িত্ববোধ।
নোভা-৭ আবারও সংকেত পাঠাল, “আমি চলতে পারি না, কিন্তু তোমাকে নির্দেশ দিতে পারি। সাবধান থেকো—ছায়া-পর্যবেক্ষকেরা হয়তো জানে, আমি পৃথিবীতে নেমেছি।”
আদিব হাঁটতে শুরু করল গ্রামের প্রান্ত পেরিয়ে। গ্রীষ্মের সকালে হালকা কুয়াশার চাদর বিছানো, মাঝে মাঝে দূরের গাছ থেকে পাখির ডাকে নিরবতা ভেঙে যাচ্ছে।
প্রায় ৩ ঘণ্টা হেঁটে সে পৌঁছাল সেই পরিত্যক্ত পাহাড়ি গুহার মুখে। গুহার চারপাশে জঙ্গলে ভরা, মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে একটা পুরনো সাইনবোর্ড—“সীমান্ত রক্ষা এলাকা - প্রবেশ নিষেধ”।
আদিব আরেকবার ভাবল, “আমি ঠিক কাজটা করছি তো?” কিন্তু সেই মুহূর্তে তার গলার ভেতর যেন কেউ চাপা গলায় বলল, “ভয় নয়, জ্ঞান সামনে এগিয়ে যায়।”
সে নিঃশ্বাস নিয়ে গুহার ভেতর ঢুকল।
🕳️ গুহার রহস্য
গুহার ভেতর ঢোকার পর সে অনুভব করল জায়গাটা অস্বাভাবিক ঠান্ডা। দেয়ালে অদ্ভুত সব চিহ্ন—আধা-প্রাচীন, আধা-বৈজ্ঞানিক। হঠাৎ সে দেখল মাটির ওপর বসানো এক গোলাকার বেদি, যার মাঝখানে বসানো ধাতব চক্র ঘূর্ণায়মান।
নোভা-৭ এর কণ্ঠ ফিরে এল,
“এই সময়চক্রে তোমার হাত রাখো।”
আদিব চুপচাপ হাত রাখল সেই ঘূর্ণায়মান চক্রের উপর। মুহূর্তেই, এক আলো তার শরীর দিয়ে ছড়িয়ে পড়ল। চোখের সামনে সে দেখতে পেল নানা দৃশ্য—পুরনো সভ্যতা, ভবিষ্যতের শহর, ধ্বংসস্তূপ, আর এক ভয়ঙ্কর মুখোশধারী লোক, যার চোখে যেন আগুন।
নোভা-৭ বলল:
“ওই লোক হচ্ছে প্রধান ছায়া-পর্যবেক্ষক। তার নাম ড্রাক্সিল। সে সময়কে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়। সে তোমার খোঁজ জানে না, কিন্তু খুব শিগগিরই পাবে।”
আদিব ধীরে ধীরে হাত সরিয়ে নিল। মাথা ঘুরছে। চোখে জল চলে এসেছে—কিন্তু সেটা ভয় থেকে নয়, বরং নতুন দায়িত্বের ভার থেকে।
🔚 শেষের আগে শুরু
সে যখন গুহা থেকে বেরিয়ে এল, সূর্য তখন মাথার উপরে। কিন্তু আদিব বুঝল, তার জীবন আর কখনো আগের মতো হবে না। সে এখন শুধু এক কিশোর নয়—সে একজন সংরক্ষক।
আর সামনে অপেক্ষা করছে এমন সব রহস্য, যেগুলো হয়তো সময়, ইতিহাস আর ভবিষ্যৎকেও পাল্টে দিতে পারে।
✴️ অধ্যায় ৩: "ড্রাক্সিলের ছায়া"
আদিব যখন সীমান্ত-গুহা থেকে ফিরে আসে, তখন দিন গড়িয়েছে। চারপাশের আলো মলিন, বাতাস ভারী। কিন্তু তার ভেতরে চলছে এক তীব্র ঝড়। যেটা সে ছিল—একজন সাধারণ ছেলে, সেটা আর নেই। সে এখন একজন সংরক্ষক, যার রক্তে বয়ে চলেছে সময়ের প্রাচীন কম্পন।
তবে তার যাত্রা শুরু হলেও, বিপদ তখনও অনুচ্চারিত ছিল।
🌒 অজানা সিগন্যাল
রাত ৩টার দিকে, সে ঘুমিয়ে ছিল তার কক্ষে। হঠাৎ করেই তার ঘড়ি বন্ধ হয়ে যায়। ঘরের বাতি নিভে যায়। জানালার কাঁচে পড়তে থাকে হালকা নীলচে ছায়া। ঘরের ভেতর ঠান্ডা হাওয়া ঢুকে পড়ে, সঙ্গে ভেসে আসে এক অচেনা শব্দ।
“ঘ্ঁন ঘ্ঁন ঘ্ঁন…”
আদিব চোখ খুলতেই দেখতে পেল, জানালার ওপাশে ভেসে আছে অদ্ভুত এক ছায়ামূর্তি—তার শরীরে কোনো স্পষ্ট গঠন নেই, তবে চোখদুটি জ্বলছে হালকা লাল আলোয়।
কণ্ঠস্বর ভেসে এলো—
“তুমি জেগে গেছো। ঠিক যেমনটা ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল।”
“আমার নাম ড্রাক্সিল। ছায়া-পর্যবেক্ষকদের নেতা। সময় আমার হাতে খেলনা, ইতিহাস আমার আয়না।”
আদিব প্রশ্ন করলো, “তুমি আমার কাছে কী চাও?”
ড্রাক্সিল এগিয়ে এলো। তার ছায়া যেন ধীরে ধীরে ঘরের মেঝে বেয়ে আদিবের দিকে গড়িয়ে আসে।
“টাইম-কোর কোথায়? নোভা-৭ কোথায়? আমাকে তা বলো। আমরা চাই সময়কে নতুন করে লিখতে। যেখানে কেউই মৃত্যু বরণ করবে না, কেউই ভুল করবে না, কারণ সবকিছু হবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে।”
আদিব দৃঢ়ভাবে উত্তর দিলো, “সময়কে যেভাবে তুমি চাও, সেভাবে বদলালে তা ভবিষ্যৎ ধ্বংস করবে। আমি কিছুই তোমাকে বলবো না।”
ড্রাক্সিল একটু হাসল। তার হাসির শব্দ ছিল ধাতব আর হিমশীতল।
“তুমি বাঁচবে না, কিশোর সংরক্ষক। তুমি জানো না, কী বিপদের সামনে দাঁড়িয়ে আছো।”
মুহূর্তেই সেই ছায়ামূর্তি অদৃশ্য হয়ে যায়, আর ঘর আবার স্বাভাবিক আলোয় ফিরে আসে।
💽 নোভা-৭ এর বার্তা
পরদিন সকালে আদিব বাগানে বসে টেলিস্কোপ পরিষ্কার করছিল, তখনই সে শুনতে পেল তার পকেটের ছোট যন্ত্রটা বেজে উঠছে। এটা নোভা-৭ এর সংকেতগ্রাহী যন্ত্র।
সে যন্ত্রটা চালু করতেই নোভা-৭ এর হ্লগ্রাফিক রূপ ভেসে উঠল।
“ড্রাক্সিল তোমার সন্ধান পেয়েছে। তোমার সামনে আছে দুটি পথ—লুকিয়ে থাকা অথবা প্রস্তুত হওয়া।”
“তুমি বলেছিলে, আমি সংরক্ষক, কিন্তু আমাকে কেউ শিখায়নি কীভাবে এই শক্তি ব্যবহার করবো,” আদিব বলল।
নোভা-৭ এবার ভিন্ন কণ্ঠে বলল,
“তোমাকে যেতে হবে ‘অরোরা টাওয়ারে’। ওখানে সংরক্ষকদের আদি রেকর্ড সংরক্ষিত আছে। সেখানে আছে ‘ক্যালিব্রেশন চেম্বার’, যা তোমার ভিতরের শক্তি জাগিয়ে তুলবে।”
“কিন্তু সেটা কোথায়?”
“ঢাকার পুরনো শহরের নিচে। ১৯৬০ সালে এক গোপন সংরক্ষক টাওয়ারটি গড়ে তোলেন। এখন তা পুরনো কারখানার ছদ্মবেশে লুকানো।”
আদিব মাথা ঝাঁকালো। তার চোখে আর দ্বিধা নেই।
🛤️ ঢাকার পথে যাত্রা
পরদিন ভোরে, সে বাস ধরে রওনা দিল ঢাকার দিকে। তার ব্যাগে টর্চ, নোভা-৭ এর যন্ত্রাংশ, জিপিএস এবং একটি পুরনো মানচিত্র।
বাসের জানালায় ভেসে উঠছিল দিগন্তরেখা—তার প্রিয় গ্রামের সৌন্দর্য ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছিল, আর তার হৃদয় ভরে উঠছিল দায়িত্বের ও সাহসের মিশ্র অনুভূতিতে।
নোভা-৭ আবারও সতর্ক করল—
“ড্রাক্সিল তার ছায়াদের পাঠিয়েছে তোমার খোঁজে। তারা মানুষ রূপে, ছায়া রূপে, তোমার আশেপাশেই থাকতে পারে।”
🔚 অধ্যায়ের শেষ দৃশ্য
বাস যখন নারায়ণগঞ্জ পেরিয়ে পুরনো ঢাকা শহরের দিকে আসছে, আকাশ ধীরে ধীরে কালো মেঘে ছেয়ে যেতে থাকে।
একটি কালো গ্লাভস পরা ব্যক্তি বসে আছে বাসের পিছনের আসনে। তার চোখ ঢেকে রাখা রোদচশমায় হালকা লাল ঝিলিক।
সে নিচু গলায় মোবাইলে ফিসফিসিয়ে বলছে:
“সংরক্ষক ঢুকেছে শহরে। সময় এসেছে।”
✴️ অধ্যায় ৪: "অরোরা টাওয়ারের গোপন কক্ষ"
পুরনো ঢাকা শহরের বুক চিরে চলেছে এক শান্ত বাস। জানালার ওপার দিয়ে কেবল উঁচু দালান আর ভাঙাচোরা ইটের গন্ধ ভেসে আসছে। আধুনিকতা আর অতীত একসাথে হাঁটছে এই শহরে।
আদিবের হাতে ধরা ছিল মানচিত্র—যেটা নোভা-৭ এর নির্দেশে সে গ্রহ থেকে পাঠানো তথ্য দিয়ে পুনর্গঠন করেছে।
“পুরনো চামড়া কারখানা, লালবাগের শেষ মাথায়—সেখানে রয়েছে অরোরা টাওয়ার,” নোভা-৭ জানায়।“ঢাকার নিচে কয়েকশো বছর আগেই গড়ে তোলা হয়েছিল সংরক্ষকদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।”
🏭 কারখানার ছদ্মবেশ
চামড়ার গন্ধ, পুরনো মেশিনের আওয়াজ আর রিকশার ঘণ্টা মিলে চারপাশটা মনে হচ্ছিল সাধারণই। কিন্তু আদিব বুঝে গেল, এটা কেবল মুখোশ।
ধাপে ধাপে সে নামতে থাকল এক আঁধার করিডোরের ভেতর দিয়ে। বাতাসে ভেসে আসছিল ধুলো আর পুরনো লোহা। হঠাৎ আলো জ্বলে উঠল—নীল, গোলাপি আর সাদা—ঠিক যেমন নোভা-৭ এর আলো।
🌀 ক্যালিব্রেশন চেম্বার
একসময় সে পৌঁছাল এক গম্বুজাকৃতি কক্ষে। দেয়ালে খোদাই করা আছে তারার মানচিত্র, সময়রেখা, এবং সংরক্ষকদের প্রতীক—একটি হাত যার মাঝখানে উজ্জ্বল চক্র।
নোভা-৭ বলে উঠল,
“এই চেম্বার তোমার দেহে থাকা টাইম-ফ্রিকোয়েন্সি স্থির করবে। কিন্তু সাবধান, ভুলভাবে এলে সময় নিজেই প্রতিশোধ নেয়।”
আদিব নিঃশ্বাস নিয়ে চেম্বারের ভিতরে প্রবেশ করল। চারপাশ ঘূর্ণায়মান, চেম্বার বন্ধ হয়ে গেল।
⚡ শক্তির জাগরণ
আচমকা তার মনে পড়তে থাকল নানা দৃশ্য—সে যেন simultaneously অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যতে বিচরণ করছে।
-
একটি সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আগুনে
-
এক শৈশব, যেখানে সে টেলিস্কোপ হাতে আকাশ দেখছে
-
এক ভবিষ্যৎ যুদ্ধ, যেখানে ছায়ারা পৃথিবী গ্রাস করতে চাইছে
তার বুকের মাঝে যেন আগুনের মতো এক আলো জ্বলে উঠল। চেম্বারের বাইরে থাকা যন্ত্রগুলো কাঁপতে শুরু করল। নোভা-৭ উচ্চস্বরে ঘোষণা করল,
“পার্থিব শক্তির সঙ্গে কল্প-মাত্রা মিশ্রিত হচ্ছে! সংরক্ষক পুনর্জাগ্রত!”
চেম্বার খুলে গেল। আদিব পড়ে রইল মেঝেতে। তার চোখ জ্বলছে হালকা নীল আলোয়।
সে এবার শুধু সময় বুঝতে পারে না—সে সময় অনুভব করে।
👁️ ছায়াদের আগমন
চেম্বার থেকে বের হতেই তার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল চারটি ছায়ামূর্তি—কেউ ছিল মানুষরূপে, কেউ পুরোপুরি ছায়া। তাদের চোখে লাল আলো, মুখে হিমশীতল চাহনি।
তাদের নেতা এগিয়ে এল। সে জানাল,
“আমরা জানি তুমি এখানেই আসবে। আর আমাদের প্রভু ড্রাক্সিল তোমাকে চাই—জীবিত, অথবা না থেকেও।”
আদিব এবার পিছু হটল না। তার হাতের আঙুলে ঘূর্ণায়মান নীল আলোর বল তৈরি হল।
সে প্রথমবারের মতো সময় থামিয়ে দিল। চারপাশ স্তব্ধ হয়ে গেল।
তিন সেকেন্ড—মাত্র তিন সেকেন্ডের জন্য।
তবে সেটাই ছিল যথেষ্ট।
সে ছায়াদের পাশ কাটিয়ে দৌড় দিল উপরের দিকে। আর পিছনে নোভা-৭ চিৎকার করে বলল,
“তুমি সময়কে ছুঁয়েছো। এখন সময় তোমার পেছনে থাকবে না—তোমাকে চলতেই হবে।”
🏃 অধ্যায় শেষ: পালিয়ে বাঁচা নয়, পালিয়ে জেতার প্রস্তুতি
“সংরক্ষক জেগেছে। এবার যুদ্ধ শুরু হবে।”
আদিব থেমে যায় না। সে জানে, সামনে অপেক্ষা করছে আরেক মহার্ঘ অভিযান।
✴️ চূড়ান্ত অধ্যায়: “সময়ভ্রষ্টের শেষ উল্লাস”
🌌 চিরন্তন রাতের দরজা
পুরো পৃথিবীর সময় ধীরে ধীরে বিকৃত হয়ে যাচ্ছিল। কিছু অঞ্চলে সকাল আটটায় সূর্য ডুবে যাচ্ছিল, কোথাও দুপুরে রাত নেমে আসছিল। ঘড়িগুলো একেক জায়গায় একেকরকম চলছিল—কখনো থেমে যাচ্ছিল, কখনো পেছন দিকে ঘুরছিল।
এ ছিল ড্রাক্সিলের ছায়াশক্তির শেষ পর্ব—সময়ভ্রষ্টতা।
আদিব দাঁড়িয়ে ছিল চাঁদপুরের এক পরিত্যক্ত ফেরিঘাটে, যার নিচে গোপনে নির্মিত ছায়ামহল—ড্রাক্সিলের ঘাঁটি।
নোভা-৭ জানায়,
“এই ছায়ামহলে রয়েছে সময়-চাবি। ওটিই ড্রাক্সিল ব্যবহার করছে সময়কে মুছে দিতে।”
🔓 ছায়ামহলে প্রবেশ
আদিবের শরীরে তখন নতুন শক্তির সঞ্চার—সে আর কেবল একটি ছেলে নয়, বরং সময়ের ধারক।
“তুমি শেষ আশার আলো। আমাদের ইতিহাস যদি তুমি হারাও, ভবিষ্যৎ আর লেখা হবে না।”
গভীরে গিয়ে সে দেখতে পেল বিশাল এক গম্বুজ—তার মাঝখানে ঘূর্ণায়মান টাইম-চাবি, চারপাশে ড্রাক্সিল এবং তার ছায়ারা।
ড্রাক্সিল আদিবকে দেখে হেসে উঠল—
“অবশেষে তুমি এসেছো। আমার ছায়ার ভেতরে তুমিও আছো। তোমার জন্মটাই এক বিকৃতি। জানো কেন?”
আদিব স্তব্ধ।
ড্রাক্সিল বলল,
“তোমার বাবা ছিল একজন ব্যর্থ সংরক্ষক। সে এই টাইম-চাবি লুকাতে গিয়ে নিজেই সময়চক্রে হারিয়ে যায়। কিন্তু তার রক্ত আমার মধ্যেও আছে, কারণ আমি... তার ছায়া।”
⏳ নিঃশব্দ সময়যুদ্ধ
এই কথা শোনার পর আদিবের মধ্যে এক বিস্ফোরণ ঘটে। তার চারপাশে সময় তরঙ্গ তৈরি হয়। সে আক্রমণ করে ড্রাক্সিলকে, কিন্তু ড্রাক্সিল প্রতিহত করে সময়-পাঁচালিতে।
তখন শুরু হয় নিঃশব্দ যুদ্ধ—যেখানে কোনো শব্দ নেই, কেবল সময় আর ছায়ার গতিপথ।
আদিবের প্রতিটি আঘাতে সময়ের এক টুকরো ফেটে পড়ছিল, আর ড্রাক্সিল তা গিলে নিচ্ছিল যেন অসীম শক্তির উৎস।
🌀 চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
নোভা-৭ তখন বলে,
“তুমি তাকে হারাতে পারবে না সময়ের নিয়মে। তাকে থামাতে হলে তোমাকেই… টাইম-চাবি ছুঁয়ে নিজেকে বিলুপ্ত করতে হবে।”
আদিব চুপচাপ তাকিয়ে থাকে। সে জানে, এই চাবি স্পর্শ করলেই সে চিরতরে হারিয়ে যাবে সময়ের অতলে।
ড্রাক্সিল তখন বিজয়ী হেসে টাইম-চাবির দিকে এগোয়। কিন্তু তখনই...
আদিব সময়কে আটকে, নিজের সব শক্তি কেন্দ্র করে ঝাঁপিয়ে পড়ে চাবির ওপর।
“আমি সময়কে ধ্বংস হতে দেব না।”
আলোকচ্ছটা! কাঁপুনি! এক মুহূর্তের মধ্যে চারপাশ ভেঙে পড়ে।
🌟 শেষ দৃশ্য — নক্ষত্রের নিচে নীরবতা
তিন মাস পর।
আকাশ নীল, সময় স্বাভাবিক। পৃথিবী আবার নিজের নিয়মে ফিরেছে।
কিন্তু আদিব নেই। কেউ জানে না সে কোথায়। তার ঘরে পড়ে আছে সেই পুরনো টেলিস্কোপ আর নোভা-৭ এর নিস্তব্ধ খোলস।
কিন্তু একদিন রাতে গ্রামের আকাশে দেখা যায় একটি নতুন নক্ষত্র—যেটা কেউ আগে দেখেনি।
এটি জ্বলছে হালকা নীল আলোয়, নীরবভাবে।
গ্রামের ছেলেরা বলে—
“ওইটা আদিবের তারা। সে এখনও সময় পাহারা দিচ্ছে... শুধু আমাদের চোখের আড়ালে।”
0 تعليقات