জীববিজ্ঞানএর শাখা ঃ
জীববিজ্ঞান
জীববিজ্ঞান হলো বিজ্ঞানের একটি শাখা, যেখানে উদ্ভিদ,প্রাণী,অণুজীব সহ জীবনের নানা প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা ও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। জীববিজ্ঞান আমাদের জানায় কীভাবে প্রাণীরা বাঁচে, খায়, বংশবৃদ্ধি করে ও পরিবেশের সাথে সম্পর্ক রাখে। বিশাল এই বিজ্ঞানকে স্পষ্টভাবে বোঝার জন্য জীববিজ্ঞানকে বিভিন্ন শাখায় ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি শাখা জীবনের কোনো একটি নির্দিষ্ট অংশ বা দিক নিয়ে কাজ করে।
জীববিজ্ঞানের শাখাঃ
১। ভৌত জীববিজ্ঞান।
২। ফলিত জীববিজ্ঞান।
এই শাখায় জীববিজ্ঞানের তত্ত্বীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। নিম্নে এই শাখার আলোচ্য বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলো ঃ
(a) অঙ্গসংস্থান (Morphology):
এই শাখায় প্রাণীর শরীরের গঠন কেমন, বিভিন্ন অঙ্গ কোথায় থাকে এবং কীভাবে সেগুলো কাজ করে – এসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়। যেমন, মানুষের হৃদয় কোথায়, কীভাবে কাজ করে – তা জানা যায় অঙ্গসংস্থানবিদ্যার মাধ্যমে।
(b) শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যা (Taxonomy):
জীবের শ্রেণিবিন্নাস, শ্রেণিবিন্যাসের উদ্দেশ্য ও তার রীতিনীতিগুলো এই শাখার মূল আলোচ্য বিষয়।
(c) শারীরবৃত্তবিদ্যা (Physiology):
এই শাখায় জীবদেহের ভেতরের কাজ বা কার্যপ্রণালী নিয়ে আলোচনা হয়। যেমন—শ্বাসপ্রশ্বাস, রক্ত চলাচল, খাদ্য পরিপাক, হরমোন কাজ করা ইত্যাদি। এটা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে শরীরের অঙ্গগুলো কেবল আছে তা নয়, বরং তারা কীভাবে কাজ করছে।
(d) কলাবিদ্যা (Histology):
এই শাখায় জীবের কোষ ও কলার গঠন ও বিন্যাস নিয়ে অধ্যয়ন করা হয়।
(e) ভ্রূণবিদ্যা (Embryology):
জীববিজ্ঞানের এই শাখাটিতে ভ্রূণের গঠন, বিকাশ এবং বৃদ্ধি নিয়ে অধ্যয়ন করা হয়।
(f) কোষবিদ্যা (Cytology):
কোষবিদ্যা (Cell Biology) হলো জীববিজ্ঞানের একটি শাখা, যেখানে জীবদেহের প্রাথমিক গঠন একক “কোষ” সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে অধ্যয়ন করা হয়।
(g) বংশগতিবিদ্যা (Genetics):
জীবদেহের জিন ও জীবের বংশগতি ধারা সম্পর্কে এই শাখায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
(h) বিবর্তনবিদ্যা (Evolution):
এখানে জীবজগত কীভাবে ধাপে ধাপে পরিবর্তিত হয়ে আজকের রূপে এসেছে, তা নিয়ে অধ্যয়ন করা হয়।
(i) বাস্তুবিদ্যা (Ecology):
এই শাখায় মূলত প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে জীবের বিভিন্ন সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়।
(j) অন্ত্রব্যবস্থাবিজ্ঞান (Endocrinology):
Endocrinology বা অন্ত্রবিজ্ঞাণ হলো এমন বিজ্ঞান যা শরীরের গ্রন্থি ও হরমোনের কাজ ও সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে।
(k) জীবভূগোল (Biogeography):
জীবভূগোল (Biogeography) হলো জীববিজ্ঞানের একটি শাখা, যেখানে জীবজগতের বিভিন্ন প্রজাতি পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে কীভাবে ছড়িয়ে আছে এবং তাদের পরিবেশের সাথে সম্পর্ক কেমন, তা নিয়ে অধ্যয়ন করা হয়।
২। ফলিত জীববিজ্ঞানঃ
(a) জীবাশ্মবিজ্ঞান (Palaeontology):
প্রাগৈতিহাসিক জীবের বিবরণ এবং জীবাশ্ম সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
➤ এটি পৃথিবীতে জীবনের বিবর্তন এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।
(b) জীবপরিসংখ্যানবিদ্যা (Biostatistics):
জীবপরিসংখ্যান-বিষয়ক বিজ্ঞান।
➤ গবেষণা ও পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে।
(c) পরজীবীবিদ্যা (Parasitology):
পরজীবিতা, পরজীবী জীবের জীবনপ্রণালি এবং রোগ সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
➤ এটি স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে পরজীবীজনিত রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ।
(d) মৎস্যবিজ্ঞান (Fisheries):
মাছ, মাছ উৎপাদন, মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
➤ এটি জলজ পরিবেশ রক্ষা এবং খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখে।
(e) কীটতত্ত্ব (Entomology):
কীটপতঙ্গের জীবন, উপকারিতা, অপকারিতা, ক্ষয়ক্ষতি, দমন ইত্যাদি সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
➤ কৃষিকাজ, রোগবাহিত কীট এবং পরিবেশ রক্ষায় এ শাখার গুরুত্ব অপরিসীম।
(f) অণুজীববিজ্ঞান (Microbiology):
ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, আণুবীক্ষণিক ছত্রাক এবং অন্যান্য অণুজীব সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
➤ এটি ঔষধ, টিকা, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণসহ নানা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
(g) কৃষিবিজ্ঞান (Agriculture):
কৃষিবিষয়ক বিজ্ঞান।
➤ এটি উন্নত ফসল উৎপাদন, মাটির গুণমান ও কীটনাশক ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করে।
(h) চিকিৎসাবিজ্ঞান (Medical Science):
মানবদেহ, রোগ, চিকিৎসা ইত্যাদি সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
➤ এটি সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে ও নিত্যনতুন চিকিৎসা উদ্ভাবনে মুখ্য ভূমিকা রাখে।
(i) জিনপ্রযুক্তি (Genetic Engineering):
জিনপ্রযুক্তি ও এর ব্যবহার সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
➤ এটি রোগ প্রতিরোধী জীব তৈরি ও কৃষিতে উন্নত বীজ উদ্ভাবনে ব্যবহৃত হয়।
(j) প্রাণরসায়ন (Biochemistry):
জীবের প্রাণরাসায়নিক কার্যপ্রণালি, রোগ ইত্যাদি সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
➤ এটি কোষের অভ্যন্তরে রাসায়নিক বিক্রিয়া বিশ্লেষণ করে রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে।
(k) পরিবেশবিজ্ঞান (Environmental Science):
পরিবেশ সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
➤ এটি পরিবেশ রক্ষা, দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখে।
(l) সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান (Marine Biology):
সামুদ্রিক জীব সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
➤ এটি সাগরের জীববৈচিত্র্য, বাস্তুসংস্থান ও মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণে সহায়ক।
(m) বনবিজ্ঞান (Forestry):
বন, বন সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষণ সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
➤ এটি পরিবেশ রক্ষা, জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সাহায্য করে।
(n) জীবপ্রযুক্তি (Biotechnology):
মানব এবং পরিবেশের কল্যাণে জীব ব্যবহারের প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
➤ এটি চিকিৎসা, কৃষি এবং শিল্পখাতে নানাবিধ সমস্যার উদ্ভাবনী সমাধান প্রদান করে।
(o) ফার্মেসি (Pharmacy):
ঔষধশিল্প ও প্রযুক্তিবিষয়ক বিজ্ঞান।
➤ এটি রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় কার্যকর ও নিরাপদ ওষুধ তৈরিতে সহায়তা করে।
(p) বন্য প্রাণিবিদ্যা (Wildlife Science):
বন্যপ্রাণী বিষয়ক বিজ্ঞান।
➤ এটি বিপন্ন প্রজাতি সংরক্ষণ এবং প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
(q) বায়োইনফরমেটিকস্ (Bioinformatics):
কম্পিউটার প্রযুক্তিনির্ভর জীববিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য, যেমন ক্যান্সার বিশ্লেষণ বিষয়ক বিজ্ঞান।
➤ এটি বৃহৎ জৈব তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে ওষুধ আবিষ্কার ও চিকিৎসায় সহায়তা করে।
-written by Safayet hosen (Founder of EduExplainer BD)
0 মন্তব্যসমূহ